নীরবতার গভীরতা, আসা–যাওয়ার অনিশ্চয়তা, শহুরে উৎসবের ভিড়ে লুকিয়ে থাকা ব্যক্তিগত একাকিত্ব—এই কবিতাগুচ্ছ সেইসব অনুভূতিকে নতুন আলোয় দেখায়। মালতীফুলের সুবাস থেকে প্রেমের ক্ষয়, ভোরের মায়াবী স্বস্তি—সব মিলিয়ে তৈরি হয় এক নিবিড়, সংবেদনশীল কবিতার জগৎ।
মালতীফুলের পাড়া
রাত্তিরে ওরা আসে। অদ্ভুত সুবাস।
হিলহিলে একটা সাপ বেয়ে যায়—ওই গন্ধের টানে।
রাত্তিরে ওরা ফোটে। যখন সবাই ঘুমিয়েছে।
ফাল্গুন বিক্ষিপ্ত হয়ে ওদের লাল রঙে চারিদিক কেমন আলোময়।
ওদের লতানে দেহে পিপীলিকা; সারারাত মঞ্জরি
পুষ্পিতা হয়। ইতস্তত সুরভির তাঁত-বোনা চলে।
চাঁদ একটি দরিদ্র লোক। দূর থেকে দেখে আর ভাসে।
এ পাড়ার ভয়ডর নেই; তাকে যদি ধাক্কা দেয়—দিক।
সে আনেনি এক ঠোঙা লালচে কবিতা।
তার মুখে না-কামানো দাড়ি।
তবু সে সন্ধামালতী ভালোবাসে।
নির্জনতা
সেই ভোরে তোমার আর আমার মধ্যে নির্জনতা ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি ছিল না।
ধানখেতের ভাঙেনি ঘুম, জিপগাড়ির শব্দে ছড়িয়ে গিয়েছিল শুধু মুঠো মুঠো পাখির শরীর।
—তেমন আকাশ থেকে আলো নামলে মনে হয় স্বর্গীয় সংকেত পেলাম।
আমাদের প্রেম হল। যেমনটা হয়।
সেই দিন কয়েক কোটি আরও প্রেম জন্মেছিল এই গ্যালাক্সিতে।
তারপরই মুখরতা, যত শব্দ, যত কোলাহল।
আজ তোমার আর আমার মধ্যে নির্জনতা ছাড়া কিছু নেই।
আমরা বলিনি মুখে কাউকেই তবু একটা অন্ধকার ফল,
ঝুলে আছে পেকে পচে ডাঁটি থেকে এখনও হৃদয়ে।
ঝুলে থাকবে।
টুপ করে খসে পড়লে নির্জনতা হারাবে সংজ্ঞা।
আমাদের নির্জনতা। একান্ত। যেমনটা হয়। লক্ষ লক্ষ প্রেম ভেঙে গেল এই পৃথিবীতে।
অনন্ত অনন্ত প্রেম ভেঙে যাচ্ছে এই পৃথিবীতে।
সেসব ভাঙার শব্দে, কারও ঘুম ভাঙেনি
শুধুই নির্জনতা, অস্বস্তিকর—একা একা একা জেগে আছে।
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
আসা-যাওয়া
যেমনভাবে এসেছিলেন,
তেমনভাবেই যেতে দিলাম।
তেমন কোনো নাম রাখিনি—
এই অযথা আসা-যাওয়ার।
ফুলের কথা ভুলেও আমি ভাবিনি আর।
জানল না কেউ, গাছের মাথা
অঙ্ক ভরা সরল খাতা
একজীবনের জটিলতা—
কাব্যেও ঠিক শূন্য পাওয়ায়৷
সেসব হদিশ কেউ পাবে না,
মুছে দেওয়া পঙ্ক্তিমালার।
জানলা না কেউ, ইস্টিশনে
পাড়ার মোড়ে চা-দোকানে।
যেমন করে এসেছিলেন,
তেমনভাবেই যেতে দিলাম—
কার তাতে কি? স্নানের জলে একফোঁটা জল
বাড়ল কেন, খবর নেওয়ার?
তেমন কোনো নামও তো নেই—
অযথা এই আসা-যাওয়ার।
মায়াবী
ভোরবেলা সবচেয়ে সরল সময়। ঘুম আসে। রাত্রির জটিল পোশাক ধুয়ে আসি, পুকুরের ধারে। জ্যোৎস্নার বালকরা তখনও বাড়িয়ে হাত—এসো, দেখো, এই হাত ধরো—এখানে ঘাসের ঘুমে মাথা দাও; ভালোবাসা উজ্জ্বল হয়ে আছে; রাখো হাত, বসো—
সেসব ইশারা আর দ্বিধার বাতাসগুলি ঠেলে, রাতের পোশাক খুলে মৃদু উঠে আসি। অন্ধকারে আসে আলো অথবা আলোয় রাখি ঘুম, গাঢ় হয়ে নামে অন্ধকার। ভোরবেলা সবচেয়ে সহজ সময়। এ সময়ে মৃত্যু ভালো, ঘুম ভালো আর ভালো তুমি—
নিশ্চিত তুমি যেদিন আমি হয়ে যাও।
উৎসব
তোমার আমাকে না মনে পড়লেও আমার তোমাকে মনে পড়ে।
এই সহজ কথাটি লুকিয়ে যেতে চাই সপ্তমীর ভিড়ে,
বেলুনওয়ালার হাতে রঙিন গ্যাসবেলুনের মতো ফাঁপা আশ্বাসে।
টুনি লাইটের শহরকে বড়ো উজ্জ্বল লাগে যখন
তুমিও উজ্জ্বল হয়ে ওঠো,
অবান্তর কত হাসি, শব্দ, কথা উড়ে যায় রাসবিহারীর বুকে।
সেই সময়, মানুষ বড়ো একলা—এই কথাটা মিথ্যে হয়ে যেতে যেতে,
হঠাৎ তোমাকে বড়ো মনে পড়ে।
তোমাকে আমার মনে পড়লেও, আমাকে তোমার মনে পড়ে না—
এই সহজ কথাটি বিষাদময় নবমীর রাতের মতো
উড়ে এসে বসে।
এই তো আর কিছুদিন পর লক্ষ্মীপুজো আসবে।
লোডশেডিঙের জ্যোৎস্নায় একটা শহরে
এক মুহূর্তের জন্য একটা লক্ষ্মীপ্যাঁচা অলীক দৃশ্য এঁকে যাবে।
তখন আমার দুগ্গা নয়, লক্ষ্মী হতে সাধ হবে।
হিমেল বাতাসে কার নবান্নের নতুন গন্ধ।
আমার যে তোমাকে মনে পড়ে আজও—
সে-কথা আমি লুকিয়ে ফেলব, গোলার ধানের মধ্যে—
ছোটো হয়ে আসা দিনের পাট করা শীতের রুমালে।
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
Technophilix India
1 দিন আগেKhub valo
sukanta debnath
7 ঘন্টা আগেনির্জনতা লেখাটা ভালো