preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
একটা পরিবারের ড্রয়িংরুমে  পৌঁছে যেতে পেরেছি, এটাই প্রাপ্তি
জীবনশৈলী

একটা পরিবারের ড্রয়িংরুমে পৌঁছে যেতে পেরেছি, এটাই প্রাপ্তি

বিষয় যা-ই হোক-না-কেন আগাগোড়াই সোজাসাপটা মতামত দেন তিনি। নিজের খেয়ালে ভিডিয়োতে কথা বলা শুরু। শুনতে হলে শুনুন, না শুনলে এগিয়ে যান, এমনটাই ডোন্ট কেয়ার হাবভাব তাঁর। বাকিরা যখন সেজেগুজে ভিডিয়োতে মুখ দেখাতে আসেন সেখানে গত পাঁচ বছর ধরে নিজের আটপৌরে আলুথালু চেহারায় ঝিলম তাঁর নিজের মতো। সাম্প্রতিক সিরিয়ালের দৃশ্য নিয়ে হোক বা প্রাসঙ্গিক কোনো ঘটনা, ঝিলমের মুখে তার নিজস্ব ব্যাখ্যা শুনতে মুখিয়ে থাকে তাঁর দর্শক। কীভাবে এলেন এই পেশায়, অকপটে নিজেই জানালেন তিনি।

প্রশ্ন: নামি বাঙালি ইনফ্লুয়েন্সারদের মধ্যে ঝিলম গুপ্তর নাম প্রথম সারিতেই আসে। কীভাবে শুরু করলে এই কাজ করা?

ঝিলম: আগে আমি লেখালেখি করতাম। তারপর লকডাউনের সময় ভিডিয়ো করা শুরু করি। এমনিই মনের খেয়ালে করা ভিডিয়ো। তখন আমার কোনো পেজ ছিল না। নিজের প্রোফাইল থেকে পোস্ট করতাম। নিত্যনতুন জিনিস নিয়ে মজার ভিডিয়ো বানাতে ভালো লাগত বলেই বানাতাম। ব্যবসায়িক কোনো ব্যাপার ছিল না। এগুলো করতে করতে দেখলাম মানুষের ভালো লাগছে। তখন ভাবা শুরু করলাম কী নিয়ে বললে মানুষের ভালো লাগবে।

প্রশ্ন: মানে মজা করে একটা কাজ শুরু করে হঠাৎ বিখ্যাত হয়ে গেলে। প্রথম কোন ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল সেটা মনে আছে কি?

ঝিলম: নিশ্চয়ই। অঙ্কের ভয় নিয়ে একটা ভিডিয়ো করেছিলাম যেটা ভাইরাল হয়েছিল।

প্রশ্ন: তোমার ভিডিয়ো প্রধানত বক্তব্যমূলক। কোনো কিছু নিয়ে ব্যঙ্গ বা নিছক মজা করে তুমি বক্তব্য রাখো। সেটাও খুব হালকা চালে বলা কথা। এটা কি ইচ্ছে করে তৈরি করা একটা স্টাইল, না কি তুমি এরকমই?

ঝিলম: আমি এভাবেই বলতে ভালোবাসি। মূলত আমি সোশ্যাল ইস্যু নিয়ে কথা বলি, কিন্তু তাতে একটা মজাদার দৃষ্টিকোণ থাকে। জ্ঞানের কথা বলতে চাই না। শ্রোতা যেন বোর না হয় সেটা মাথায় রেখেই কথা বলি। এমন অনেক কিছু আছে যেগুলো অনেকেই ভাবেন, কিন্তু বলতে পারেন না। আমি সেই কথাগুলোই আমার মতো করে বলি।

প্রশ্ন: কিন্তু এই সময়ে দাঁড়িয়ে কতটুকু মজা পাওয়া যায় আমাদের চারপাশের দুনিয়া থেকে? সেটা কি নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়?

ঝিলম: ব্যাপারটা খুঁজে নেওয়ার নয়। কোনো একটা সোশ্যাল ইস্যু, ধরো একটা ধর্ষণ হয়েছে। আমি যদি বলি ধর্ষণ কোরো না, খুব খারাপ জিনিস, কেউ কি শুনবে? শুনবে না তো! সেখানে আমি যদি প্রশংসা করি সেটা বরং গায়ে লাগবে। ধরো বললাম, কী ভালো ছেলে বলো তো, একটা ধর্ষণ করেছে! অর্থাৎ একটা স্যাটায়ারের মাধ্যমে ইস্যুটাকে তুলে ধরা। এমন কিছু বলা যেটা দর্শকের মনে দাগ কাটবে। তাতে আমার বক্তব্যের উদ্দেশ্যটাও বোঝা যাবে।

প্রশ্ন: লকডাউন না এলে হয়তো এই পেশাতেই আসতে না তুমি, সেক্ষেত্রে কী হতে বলে মনে হয়?

ঝিলম: ইনফ্লুয়েন্সার না হলে আমি লেখালেখি করতাম। বরাবরই লিখতে ভালোবাসি। চাকরি যখন করতাম তখনও লেখার কাজই করতাম।

প্রশ্ন: শুরু যখন করলে কাউকে দেখে কি অনুপ্রেরণা পেয়েছিলে?

ঝিলম: না, আমার কোনো অনুপ্রেরণা সেই অর্থে ছিল না। কারণ আমি তো কারোর মতো কিছু করতেই চাইনি। কিছু করব এটাও ভাবিনি। এমনিই ভালো লাগছিল ব্যাপারটা, সেখান থেকে আপনিই হয়ে গেল। আমি ভাবিইনি কেউ দেখবে। লোকে যেভাবে ছবি পোস্ট করে আমি সেইভাবে নিজের প্রোফাইলে ভিডিয়ো পোস্ট করতাম। একসময় দেখলাম লোকে আরও ভিডিয়ো চাইছে।

প্রশ্ন: প্রতিদিন ভিডিয়োর কন্টেন্ট কীভাবে তৈরি করো? প্রাসঙ্গিক কোনো কিছু খুঁজে নাও, না কি নিজেই ভেবে বিষয় ঠিক করো?

ঝিলম: আমার কন্টেন্ট তৈরি করার মূল জায়গাটা আমার পড়াশোনার। আমার খুব পড়ার অভ্যেস আছে। সবসময় কিছু-না-কিছু পড়ি। সেখান থেকেই আইডিয়া আসে। তবে আমার সমসাময়িক ইনফ্লুয়েন্সারদের রিলগুলোও দেখি। নাহলে তো মজাটাই থাকবে না।

প্রশ্ন: সতীর্থ ইনফ্লুয়েন্সারদের রিল দেখে আইডিয়া নাও কি কখনো? না কি তাদের থেকে আলাদা কিছু করাটাই উদ্দেশ্য থাকে?

ঝিলম: আইডিয়া নিই না। কারণ প্রত্যেকের কাজের নিজস্ব ধারা আছে, নিজস্ব স্টাইল আছে। আমি তাদের সাবজেক্ট নিয়ে কাজ করতে গেলে তাদের মতো করে তো বলতে পারব না। আমি আমার মতোই বলব। তাই কাউকেই অনুসরণ বা অনুকরণ করার চেষ্টা নেই। আমার এক বন্ধু আছে গৌরব তপাদার, ও ‘প্রেতকথা’ চ্যানেলটা চালায়। ও দারুণ ভূতের গল্প বলে। আমি তো চেষ্টা করলেও ওর মতো করে বলতে পারব না। কারণ ওরকম ব্যারিটোন গলা তো আমার নেই। আমি যেটা করি সেটা আমার নিজস্ব স্টাইল।

প্রশ্ন: বেশ কয়েক বছর ধরে কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছ, কী মনে হয় এই কাজটাকে স্থায়ী পেশা হিসেবে নেওয়া যেতে পারে?

ঝিলম: নিশ্চয়ই নেওয়া যায় যদি সেইভাবে এই কাজটার পিছনে সময় দেওয়া যায়। অর্থহীন বা অশ্লীল কন্টেন্ট দিয়ে নয়, বরং স্পষ্টভাবে নিজের বক্তব্যকে তুলে ধরে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিডিয়ো বানিয়ে নিশ্চয়ই টিকে থাকা যায়। বাংলায় স্ট্যান্ড আপ কমেডি খুব একটা হয় না ঠিকই। তবে আমি যেটা করি সেটাও এক ধরনের স্ট্যান্ড আপ কমেডিই বলা যায়। শুধু আমি দাঁড়িয়ে বলি না, বসে বলি।

কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

প্রশ্ন: প্রতিদিন নতুন কোনো বিষয় নিয়ে কন্টেন্ট বানানো, ভিডিয়ো করে পোস্ট করা, দর্শক কতটা গ্রহণ করবে এসব ভেবে কি স্ট্রেস বা টেনশন হয়?

ঝিলম: স্ট্রেস বলাটা ঠিক হবে না। তবে প্রতিদিনের ভিডিয়োগুলোই আমাদের কাছে এক-একটা পরীক্ষার মতো। পোস্ট করছি কিন্তু কেমন হবে জানি না। আমি অনেক ভেবেচিন্তে একটা রিল বানালাম হয়তো। এবার সেটা যারা দেখবে তারা কীভাবে নেবে বা তাদের কেমন লাগবে সেটা নিয়ে একটা চিন্তা তো থাকেই।

প্রশ্ন: কখনো মনে হয় এবার নিজের স্টাইল বদলানো দরকার বা এবার একটু নতুনত্ব আনতে হবে?

ঝিলম: আমি কিন্তু নিজের স্টাইল বদলাই মাঝেমাঝেই। আগে একটা ‘টপোরি’ স্টাইলে বলতাম। পরে সেটা পালটে অন্যভাবে বলা শুরু করি। এছাড়াও নানারকম জিনিস করেছি, করি মাঝে মধ্যেই। একইরকম স্টাইলে প্রতিদিন ভিডিয়ো বানালে মানুষের ভালো লাগবে না। তাই নতুন কিছু নিয়ে সবসময়েই ভাবতে হয়।

প্রশ্ন: প্রায় বছর পাঁচেকের এই জার্নিতে তোমার প্রাপ্তি কী বলে মনে হয়?

ঝিলম: আমার যেটা সবচেয়ে বড়ো পাওয়া সেটা হল আমার কন্টেন্ট সব বয়সের মানুষ দেখেন। বাড়ির সকলে মিলে আমার ভিডিয়ো দেখেন। এমন নয় যে ছোটোদের সামনে দেখা যাবে না বা শোনা যাবে না। বাচ্চারাও আমার ভিডিয়ো নকল করে ভিডিয়ো বানিয়েছে। সেটা করতে তাদের বাবা মায়েরাই উৎসাহ দিচ্ছেন। একটা পরিবারের ড্রয়িং রুমে পৌঁছে যাওয়া, এই ব্যাপারটাই আমার কাছে প্রাপ্তি।

প্রশ্ন: একজন ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে কতটা সামাজিক দায়িত্ব থাকে বলে মনে হয়? আজকাল অনেকেই ভিডিয়োতে এমন অনেক কথা বলছে যেটা শুনতে খারাপ লাগছে বা অনেককে আঘাত করছে। তুমি নিজে কি এগুলো মাথায় রেখে ভিডিয়ো বানাও?

ঝিলম: আমার কাউকে কিছু বলার নেই। যে যেভাবে করছে করুক। তবে আমি নিজের ক্ষেত্রে বলতে পারি যে, কী বলছি বা বলছি না তার থেকেও বেশি জরুরি কীভাবে বলছি। ধরো আমি কাউকে বলছি ‘বাজে বকিস না’। সেটা আমি আমার কাছের বন্ধুদের সামনে একভাবে বলব, কিন্তু সেটাই যখন ভিডিয়োতে প্রেজেন্ট করব তখন তো সেই বাচনভঙ্গি একরকম হবে না। কারণ সেটা বিভিন্ন বয়সের মানুষ শুনবেন। একই কথা অন্য ভাষা প্রয়োগ করেও তো বলা যায়। তাই ভাষা প্রয়োগ বা বলার ভঙ্গির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা দরকার।

প্রশ্ন: প্রতিদিন কন্টেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং কোনটা? বাজেট, না কি বিষয় বেছে নেওয়া?

ঝিলম: বাজেটের চ্যালেঞ্জ নেই যেহেতু ঘরে বসে করি। যেটুকু যা দরকার হয় সেটা জোগাড় হয়ে যায়। আর বিষয়ের আইডিয়া নিজের কাজের মধ্যে দিয়েই আসে।

প্রশ্ন: এমন একটা ছকভাঙা কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য কোনো পারিবারিক বা সামাজিক বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে কখনো?

ঝিলম: বাধা ঠিক বলব না, তবে বাবা প্রথমদিকে বুঝতে পারত না এটা কী করছি। এটা আদৌ কোনো কেরিয়ার অপশন হতে পারে বলে বিশ্বাস করত না। সেটা বাবাকে বোঝাতে একটু সময় লেগেছে। অবশ্য বাবাদের পক্ষে সেটাই স্বাভাবিক, কারণ এটা যে পেশা হতে পারে সেটা তো আমরাও কয়েক বছর আগে জানতাম না। পরে যখন দেখেছে এত মানুষ দেখছে, রাস্তাঘাটে দেখা হলে মানুষ আমাকে চিনছে, তখন খুশি হয়েছে।

প্রশ্ন: নতুন যারা এই কাজটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাইছে তাদের কী পরামর্শ দেবে?

ঝিলম: আমার মনে হয় শুধু কন্টেন্ট ক্রিয়েশন নয়, যেকোনো কাজের ক্ষেত্রেই সৎ থাকা খুব জরুরি। এমন নয় যে কাজটা করতে হয় তাই করছি বা যাহোক কিছু একটা করে দিলাম, এভাবে বেশিদিন চালানো যায় না। আর সেই কাজটাকেও ছোটো করা হয়। মন দিয়ে করা দরকার, আর অবশ্যই এমন কিছু করো যেটা মানুষের মনে থাকবে।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

লেখক

কেতাব-ই বাংলা সাহিত্য ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনের প্ল্যাটফর্ম।

অন্যান্য লেখা