preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
সকলের জন্য সংবিধান: পর্ব ৩
ধারাবাহিক

সকলের জন্য সংবিধান: পর্ব ৩

13 Sep, 2025.

এই ধারাবাহিক আলোচনায় ভারতের সংবিধান সম্পর্কে ধারণা তৈরি করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। তেমন প্রচেষ্টা আগে হয়নি, এমন কোনো দাবি আমাদের নেই। তফাৎ শুধু এই, আমরা চাইছি সহজ বাংলায় এই আলোচনাটা চালিয়ে যেতে। যতটা সম্ভব সহজ। যে কোনো দেশের নাগরিক সংবিধান সম্পর্কে ওয়াকিফহাল থাকবেন, এ কথা ধরে নেওয়া হলেও, কথাটা যে সত্য নয়, তা আমরা দৈনন্দিন জীবনে জানি। সেই জানা সত্যটা একটু যদি পাল্টে যায়, এরকম একটা প্রত্যাশা থেকে আমাদের এই অভিযান। আপনি, আপনারা, যোগ দিন এই আলোচনায়।

প্রসঙ্গ নাগরিকত্ব

ভারতে বসবাসকারী, এমনকি প্রবাসী ভারতীয় নাগরিকদেরও বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোটাধিকার নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। ভারতের নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি ভোটার তালিকা সংশোধনের বহুব্যবহৃত পদ্ধতিটিকে এক নতুন রূপ দিয়ে নাগরিকদের এক বৃহদাংশের মধ্যে আশঙ্কা, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে। এই পদ্ধতির ডাকনাম, সার (SIR-Special Intensive Revision)। ছোট ডাক নামটি যথোপযুক্ত হয়েছে বলেই আমাদের ধারণা, কারণ SIR-এর বাংলা, জনাব বা মহাশয়।

শেষ বাক্যের ছেঁদো কথা অগ্রাহ্য করলেও, যা নিয়ে আমাদের এ পর্বের আলোচ্য—তা হল, নাগরিকত্ব। ভারতের নির্বাচন কমিশন ভারতের বাসিন্দাদের নাগরিকত্বের যাথার্থ্য নির্ণয় করছেন। এ ক্ষেত্রে কমিশন প্রথম বারের ঝাড়পোঁছ করে ফেলার পরে, ভোটার তালিকার বাইরে যাঁরা থাকছেন, তাঁদের ওপর নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার দায় বর্তাচ্ছে।

কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

সংবিধান নিয়ে আমাদের আগের দু প্রস্থ আলোচনাতে একাধিক বার নাগরিক শব্দটি উল্লেখ করতে হয়েছে। নাগরিক কথাটা সংবিধানের প্রস্তাবনাতেও রয়েছে, যা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি প্রথম দফার আলোচনায়দ্বিতীয় আলোচনায় আমরা নাগরিকের কর্তব্য নিয়ে সংবিধান কী বলছে, সে নিয়ে একটা রেখাপাত করার চেষ্টা করেছি।

নাগরিক কথাটা যেহেতু সংবিধানে বারবার আসছে এবং আসবে, ফলে আমাদের মনে হচ্ছে, সংবিধানে নাগরিক বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে, কোন নির্দিষ্ট রূপরেখার মাধ্যমে কে নাগরিক, কে নাগরিকত্বের অধিকার হারাতে পারেন, কে নাগরিক হতে পারেন, এ সম্পর্কে একটু আলোচনা থাকা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে, নাগরিক বা অন্য যে কোনো বিষয় নিয়েই, আমরা আলোচনা করব সংবিধান নিয়ে, আইন নিয়ে নয়। সংবিধান, আইন পরিবর্তনের সুযোগ রেখেছে— সে বিষয়টি পৃথক, এবং আলাদাভাবেই সে প্রসঙ্গে কথা হওয়া উচিত। সংবিধান আইন প্রণয়নের জন্য সংসদের দুটি কক্ষ স্থির করে রেখেছে, স্থির করে রেখেছে রাষ্ট্রপতি পদও। মূল কথাটা বা ডিসক্লেমারটা হল, নাগরিকত্ব নিয়ে আইন যা ছিল, বা যা সংশোধিত হয়েছে, সেগুলি আমাদের আলোচ্য নয়। আমরা সংবিধানের নাগরিকত্ব নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি।

নাগরিকত্ব নিয়ে আলোচনা রয়েছে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগ-এ, অনুচ্ছেদ ৫ থেকে ১১-এ।

শুরুতেই, ৫ নং অনুচ্ছেদে তিনটি উপবিভাগে বলে নেওয়া হয়েছে, সংবিধান কার্যকর হওয়ার শুরুর সময় থেকে যাঁরা ভারতের কোনো না কোনো রাজ্যের বাসিন্দা, তাঁরা ভারতের নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

যাঁদের বাবা-মা অথবা ঠাকুর্দা-ঠাকুমা কিংবা দাদু-দিদা ভারতের কোনো না কোনো রাজ্যে জন্মেছেন, তাঁরাও ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন।

সংবিধান কার্যকর হওয়ার শুরুর সময়ের পাঁচ বছর আগে থেকে যে বা যাঁরা ভারতের কোনো রাজ্যের বাসিন্দা, তাঁরাও ভারতের নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

আমরা সকলেই জানি, স্বাধীন ভারতের গঠন হয়েছিল বিভাজনের মাধ্যমে। দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। সে কথা মাথায় রেখে সংবিধান প্রণেতারা সংবিধানের ৬ নং অনুচ্ছেদ প্রণয়ন করেছিলেন। ৬ নং অনুচ্ছেদে পাকিস্তান থেকে আসা মানুষের নাগরিকত্ব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদের প্রথম উপবিভাগে বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তি ভারতে জন্মেছিলেন, যাঁদের বাবা বা মা ভারতে জন্মেছিলেন, এবং যাঁদের ঠাকুর্দা বা ঠাকুমা অথবা দাদু কিংবা দিদা ভারতে জন্মেছিলেন, তাঁরা ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী। তবে সেক্ষেত্রে একটি সময়কাল নির্দিষ্ট করা হয়েছিল ভারতের সংবিধানে। এই সময়কাল ১৯৩৫ সাল। কেন ১৯৩৫ সাল, তার নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। ওই বছর ভারত শাসন আইন (গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট) কার্যকর হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই আইন পাস হয়েছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। এই আইনবলে ভারতের রাজনৈতিক প্রকৃতিতে বেশ কিছু সংস্কার করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিন্যাস ইত্যাদি। এই আইনের আরো বিভিন্ন দিক রয়েছে, কিন্তু আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, আইন বিষয়ে আলোচনার মধ্যে প্রবেশ করলে আমাদের মূল লক্ষ্য ভ্রষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকবে, ফলে আমরা সংবিধানের মধ্যেই সীমিত থাকার চেষ্টা করব।

১৯৩৫-এর মতই আর একটি সুনির্দিষ্ট সময়কাল নাগরিকত্ব নিয়ে সমান গুরুত্বপূর্ণ। সে নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সংবিধানের এই অনুচ্ছেদেই। ১৯ জুলাই, ১৯৪৮। এই তারিখের আগে যদি কেউ পাকিস্তান থেকে ভারতে এসে বসবাস শুরু করেন, তাহলে তিনি ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন।

১৯৪৮ সালের ১৯ জুলাই-এর পর যদি কেউ পাকিস্তান থেকে ভারতে এসে বসবাস শুরু করেন, তাঁরাও শর্তসাপেক্ষে ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য হতে পারবেন। শর্ত হল, ভারত সরকারের কোনো আধিকারিক তাঁদের ভারতের নাগরিকত্বের জন্য নিবন্ধীকৃত করেছেন, বা তাঁরা ভারত সরকারের কোনো আধিকারিকের কাছে এই নিবন্ধনের জন্য সুনির্দিষ্ট ফর্মে যথাযথভাবে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।

তবে যে কোনো আবেদনপত্রই যে গৃহীত হবে না, তা-ও স্পষ্ট করে উল্লেখ করা রয়েছে সংবিধানে। বলা হয়েছে, এই নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারীকে ভারতের কোথাও না কোথাও অন্তত ৬ মাস বসবাস করতে হবে।

সংবিধানের ৭ নং অনুচ্ছেদে আমরা আবার একটা তারিখের উল্লেখ পাচ্ছি। ১ মার্চ, ১৯৪৭। এই তারিখের পর, ভারত থেকে যাঁরা পাকিস্তান গিয়েছেন, তাঁদের জন্য সংবিধানের ৫ ও ৬ নং অনুচ্ছেদ কার্যকর হবে না, অর্থাৎ, তাঁরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন না।

তবে এ ক্ষেত্রেও ছাড়-এর উল্লেখ করা হয়েছে সংবিধানে। বলা হয়েছে, যাঁরা পাকিস্তান থেকে ভারতে স্থায়ী ভাবে ফিরে আসার জন্য সরকারি অনুমতি পেয়েছেন, তাঁরা ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য হতে পারবেন।

সংবিধানে ৮ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের সম্পর্কে। বলা হয়েছে, সংবিধান তৈরির সময়কালে ভারতের বাইরে বসবাসকারী ব্যক্তিবর্গ ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন, যদি তাঁরা সেই সব দেশের রাষ্ট্রদূত বা কনসুলারের মাধ্যমে নাগরিকত্বের আবেদন করেন এবং সেই আবেদন গৃহীত হয়। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে, এই নিয়ম কার্যকর হবে ভারতে যাঁরা জন্মেছেন, বা যাঁদের বাবা-মা বা ঠাকুর্দা-ঠাকুমা অথবা দাদু-দিদা ভারতে জন্মেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে।

সংবিধানের ৯ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যাঁরা স্বেচ্ছায় অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাঁরা ভারতের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন না।

সংবিধানের ১০ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, উপরোক্ত যে কোনো একটি উপায়ে যাঁরা ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তাঁরা সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত আইন বলে ভারতের নাগরিক হিসেবে বহাল থাকবেন।

১১ নং অনুচ্ছেদে সংবিধান বলছে, এ সবের পরেও, অর্থাৎ উপরোক্ত উপায়গুলির মাধ্যমে যাঁরা ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছেন বা পাননি, উভয় ক্ষেত্রেই, সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত আইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের নাগরিকত্ব গৃহীত হতে পারে বা নাগরিকত্বের অবসান ঘটানো যেতে পারে।

সংবিধানে নির্দিষ্টায়িত ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে আলোচনা করার সময়ে আমরা দেখলাম, শেষ দুটি অনুচ্ছেদে, অর্থাৎ, ১০ ও ১১ নং অনুচ্ছেদে সংসদের আইন প্রসঙ্গের উল্লেখ করা হয়েছে। এরকম প্রায় সর্বত্রই আমরা পাব, সংবিধানের আলোচনায়। এদিকে আমরা আইন নিয়ে সাধারণভাবে আলোচনা করব না— এটাও ঠিক। কিন্তু একটা বিষয় আমাদের এড়ানোর কোনো উপায় নেই। তা হল, সংসদ ও তার এক্তিয়ার। আমরা জানি যে, সাংসদ-বিধায়কদের আইনপ্রণেতা বলে উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ, এঁরা আইন প্রণয়ন করেন। এই আইন প্রণয়নের সময়ে এঁদের মাথায় রাখতে হয়, সংবিধানের স্পিরিটের কথা। এমন কোনো আইন পাশ করা যায় না, যা সংবিধানের সঙ্গে খাপ খায় না। কিন্তু, সংসদের ক্ষমতা রয়েছে, সংবিধান সংশোধন করারও।

নাগরিকত্ব নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন মতামতের সাপেক্ষে, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আলোচনাতেও এই সংবিধানের স্পিরিট এবং অসাংবিধানিকতার প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল। যদিও সেসব আমাদের বর্তমান চর্চার বিষয় নয়, শুধু পরিপ্রেক্ষিত হিসেবে পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদটি লেখা হল। আমরা বলতে চাইছি, বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতেই বারবার সংবিধান নিয়ে কথা ওঠে, উঠবেও। ফলে, সংবিধানের কিছু প্রসঙ্গ আমাদের চর্চার বিষয় হিসেবে শুধু নয়, দৈনন্দিন জীবনেও কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

মন্তব্য করুন

লেখক

আলোচক একজন অনধ্যাপক। নাতিশিক্ষিত, ভূয়োদর্শী। বয়সকালে বিভিন্নরকম সংঘে জড়িত ছিলেন। সেইসব সংঘযাপনের বর্ণময় তথা বর্ণহীন স্মৃতি ও অভিজ্ঞতাই আলোচককে এ ধরনের দুঃসাহসিক প্রকল্পপথে যেতে ইন্ধন জোগায় এবং উজ্জীবিত করে।

অন্যান্য লেখা