বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কেদার রাজা’ (১৯৫৯) পরাক্রমশালী রাজবংশের দরিদ্র অধস্তন, বিষয়বুদ্ধিহীন, আত্মভোলা একজন মানুষ। কেদারের সুন্দরী বিধবা যুবতী কন্যা শরৎ তরুণী ধরিত্রীর মতই পবিত্রতা এবং সরলতার জ্যোতিতে বিভাসিত। শহরের দুটি দুর্বৃত্তের কৌশলে এই পিতা-পুত্রীর জীবনে যে দুর্যোগ এসেছিল ‘কেদার রাজা’-য় সে কাহিনি বিবৃত হয়েছে। কেদার-শরতের নির্বুদ্ধিতাকে মূলধন করে কেদার রাজা-র গল্পের বিস্তার। উপন্যাসখানি ঘটনাপ্রধান। কাহিনির আদিতে গ্রাম্য জীবনের প্রসন্নতা, মধ্যে নাগর জীবনের বীভৎসতা, অন্ত্যে অতিপ্রাকৃত। দুটি জীবন, একটি ভালো আর একটি মন্দ, সাদা-কালো দুটি রেখার মত সমান্তরাল বয়ে গেছে। শেষে অতিপ্রাকৃতের আশ্রয়ে কাহিনি সমাপ্ত হয়েছে। কেদার রাজা নামক লোকটিকে প্রথম দিকে চলাফেরা করতে দেখা যায়, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ব্যক্তিত্বহীন এই লোকটি কন্যা শরৎসুন্দরীর আড়ালে আত্মগোপন করে। অবশ্য কেদার সম্পর্কে পাঠকের কৌতূহলও তেমন তৈরি হয় না। প্রথমদিকে কেদার রাজাকে যেটুকু দেখা গিয়েছিল তাতেই তাকে সম্পূর্ণ দেখা হয়েছে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র আসলেই কেদার কন্যা শরৎসুন্দরী।
শহুরে দুর্বৃত্তটি যখন শিকারী বিড়ালের মত ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিল তার গোঁফ দেখে শরৎ অনায়াসে তাকে চিনতে পারত। শরতের যৌবনশ্রী অবশ্যই এরকম বহু শিকারী বিড়ালকে আকৃষ্ট করেছে। সুতরাং শরৎ তাদের চেনে এবং তাদের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশলও জানে। প্রভাসকে যে শরৎ চিনতে পারে নি তাতেই মনে হয়, শরৎ চিনে না-চেনার ভান করেছে কিম্বা লেখক ইচ্ছে করে তাকে চিনতে দেন নি, গল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে। গড়শিবপুরেরশ্মশানে নিঃসঙ্গ নিঃসহায় শরৎ প্রাকৃত-অতিপ্রাকৃতকে ভয় করে নি। প্রভাস গিরীনের কবল থেকে কৌশলে সে নিজেকে মুক্ত করেছে। মুক্ত হওয়ার পর বুদ্ধি এবং তেজস্বিতায় সে দেবী চৌধুরাণীর সমতুল্য। এরকম বুদ্ধিমতী তেজস্বিনী যুবতীকে দুটি নেংটি ইঁদুরে ফাঁদে ফেলতে পারে এ-কথা অবিশ্বাস্য। ‘কেদার রাজা’-র ঘটনা ও চরিত্রে রূপকথার অবাস্তবতা, কিন্তু এর পরিবেশ বাস্তব।
দারুণ
© 2022 All Rights Reserved by ketab-e | This website is owned by Bestread Publications and Digital Services Private Limited. Design By Mindmine and Developed By Technophilix.
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া