প্রকাশিত হল শ্যামলী মিশ্রের ‘গুচ্ছ কবিতা’– ‘যে যেমন দেখে’, ‘তবু, আপাতত’, ‘ইতিহাসের মতো’, ‘চলে যাওয়ার আগে’ এবং ‘নিরুচ্চার’।
যে যেমন দেখে
অন্তিম দুটি পঙ্ক্তি লেখার পরে একলা হয়ে আছে রাত–
হঠাৎ মনে হল কোথায় যাব– এই মহানদী, অন্তহীন জীবনের সাধ
জোয়ারের জল ভেঙে গেলে আবছা বেলাভূমি সরে যায়
তারপর… যে যেমন দেখে–
দৃশ্যের ভেতরে অক্লেশে মুক্ত করি একটি মাছি অথবা রক্তের চিহ্ন।
সিঁড়ি শেষ হয়ে আসে, অস্পষ্ট মৃত্যুর মধ্যে তোমাকে ডাকি– ঠান্ডা অবশ শরীর কাঁপে
মাটির দেয়ালে ছায়া পড়ে ঘন, গম্ভীর
বোবা হয়ে আসে শীত।
সমূহ রিক্ততা অথবা ভালোবাসা কিছুই বলা হল না।
***
তবু, আপাতত
এসে দাঁড়িয়েছে থ্যাঁতলানো চাঁদ
গ্রামে গ্রামে এখন নীরবতা
পাতার ছাউনির নীচে জন্ম নিচ্ছে একটি উনুন, ত্রিভুজাকার।
রক্তরেখা নেমে আসে চৈত্রের মাঠে।
রাঙা ধোঁয়া মিশে যাবে পানাপুকুরে, এমনই প্রত্যয়ে
দিন গুনছে ক্ষয়ক্লিষ্ট ঘাট।
তবু, আপাতত অক্ষুণ্ণ থাক
এই রোদ, বৃষ্টির পৃথিবী, প্রেমজীবনের শ্বাস, বুনো ফুল, শালিকের হলুদ ঠ্যাং।
তোমার জিভের স্বাদ মনে পড়ে, শীতের কবিতা
আর অসহায় ঘুম।
***
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
ইতিহাসের মতো
মাটির কাছে ঋণী এই জীবন– স্নায়ুর শীত
পৃথিবীর সকাল, রোদ্দুর ছায়া হয়ে মিশে গেছে
অপুষ্ট মেঘের ভেতর, ঘোর লাল
তোমার গল্পের হতভাগ্য চাঁদ আমার হৃদয়ের
কিনারে এসে দাঁড়ায়।
তোমার অন্যমনস্ক ঠোঁট চৈত্রের অভিসারী
আমার বুকের মধ্যে জেগে আছে রাত, ঊষর আগুন
এ-জন্মের জোনাকি বলতে চায়
এই পথ, স্মৃতি, আশ্চর্য অন্ধকার, সারি সারি হাত
আসলে ইতিহাসের মতো পুরোনো অথবা চিরকালীন।
***
চলে যাওয়ার আগে
দেখে নিতে হয় নির্জন দেয়াল
বোবা জানালা, শূন্য উনুন, মাটির শরীরে
বুনো ঘাস, ত্রিভুজ ছায়া।
শিরশির করে ধুতুরার বন, ফসলের গায়ে লেগে থাকে
কাদা না কি রাত্রির দুরাশা।
চঞ্চল হয় বাম ঊরু, দুধ উথলে ওঠে
বেঁচে থাকে পৃথিবীর হাওয়া, শান্ত অভিনয়।
অন্তত একটি পাতা ঝরে পড়ুক, চাঁদ জাগার আগে
ভরসন্ধেবেলা ফিরে আসুক নৌকো, নীল পুঁতির হার
উড়ে যাক লাল সোয়েটারের কাছে।
অত কিছু না-বুঝেই বেরিয়ে পড়েছে তারা
কাচের আলমারি ভেঙে ছুটে আসছে ধূসর গন্ধ।
***
নিরুচ্চার
বিপন্ন পৃথিবীর স্নায়ুর ওপর মসৃণ আকাশ
অন্ধ ঘুমোয়–
ঠান্ডা, ক্ষুব্ধ লুব্ধক তারার বুক।
একটি ছায়া কেয়াঝোপের আড়ালে, মগ্নফণা
সাপের মতো জেগে থাকে।
হৃৎপিণ্ড না কি নিরুচ্চার আদিম কানন
এসব কোথায় বলবে রাত্রিচর কালো পাখি!
#
পাতারা খুলে যায়
একে একে নির্ঝরে, অক্ষরে
বেজে ওঠে চাঁদ, কাচপোকা, অপরূপ!
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন