preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
ফুটনোটে রাখা শহর
কবিতা

ফুটনোটে রাখা শহর

এই কবিতাগুচ্ছ বেঁচে থাকাকে শুধু অনুভূতি নয়, প্রযুক্তিগত ও দেহজ অভিজ্ঞতা হিসেবে তুলে ধরে। নগরীর কোলাহলে হারিয়ে যাওয়া মানুষের অন্তরঙ্গতা, যন্ত্রণার ভিতর জন্ম নেওয়া আলোআঁধারি, হতাশা—সব মিলিয়ে নির্মিত হয়েছে এক উজ্জ্বল অন্ধকার, যা এই সময়েরই ভাঙাচোরা প্রতিচ্ছবি।

ফুটনোটে রাখা শহর
শহরটা আজকাল নিজেদেরই উদ্ধৃতি দেয়—
“আমি ছিলাম মহান”, বলে ফুটনোটে,
মূল টেক্সটে শুধু ফাঁকা ঘর
আর কিছু অসমাপ্ত এলিপসিস…

একটা ছেঁড়া বিলবোর্ডে লেখা—
UPDATE PENDING…
তার নিচে বৃষ্টি,
তারও নিচে এক ভবঘুরে কবির ভেজা ডায়েরি,
যার প্রতিটি পাতায় অক্ষরগুলো
নিজেদের লগ–আউট করে দিচ্ছে।

কোনো এক সময়ে
মানুষরা স্মৃতির স্ক্রিনশট নিয়ে চলত,
এখন তারা স্মৃতিগুলোকে
“Allow Tracking?” জিজ্ঞেস করে।

বিকেলের বাতাস
নিজেকে ডিলিট করে ফেলেছে—
আমার শ্বাসে তাই
কিছু আনডু করা ব্যর্থতা
দুলে ওঠে।

শেষে দেখি
সমস্ত গল্পই আসলে
একটা ডেড-লিঙ্ক—
তবু আমরা ক্লিক করি,
কারণ ভেঙে যাওয়া পেজেও
কখনো–কখনো
একটা অলৌকিক লোডিং আইকন
চমকে ওঠে।

বিরতির পরে পৃথিবী
পৃথিবী নাকি আজ
নিজেকে ‘ড্রাফট’ করে রেখেছে—
পাবলিশ হবে কি না
এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।

গাছেরা বলে,
মানুষের স্মৃতি আসলে
রাতের বেলায় চালু থাকা
একটা অটো–কারেক্ট,
যেখানে ভুলটাই ঠিক হয়ে ওঠে
আর ঠিকটাকে ভুল বানিয়ে ফেলে
এক অদৃশ্য এডিটর।

রোদের উপর বসে
একটা ছায়া নিজেরই ছায়াকে
ব্লক করে দিল—
কারণ দু-জনেই নাকি
একই পরিচয়ে ক্লান্ত।

বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা
এক বৃদ্ধের মুখে
সময়ের ধুলো—
তিনি বলেন,
তার বয়স নাকি
যুদ্ধ–পরবর্তী কোনো অনুচ্ছেদের
মিসপ্রিন্ট।

নদীর দিকে তাকালে এখন
জল নয়—
দেখা যায় স্ক্রল করা শব্দেরা;
যেগুলোকে আমরা ভাবতাম
ব্যথা, ভিড়, বৃষ্টি—
আসলে সবই ছিল
হাইপারলিঙ্কের ছদ্মবেশ।

আমরা যারা হাঁটছিলাম
এক বিশাল মার্জিনের ভেতর দিয়ে,
হঠাৎই দেখি
গল্প শেষ—
কিন্তু ফুটনোটগুলো
চলতেই থাকে,
নিজেদের জন্ম–মৃত্যুর হিসেব
পুনরায় টাইপ করতে থাকে।

যেখানে যাই
অদৃশ্য এক হাত
আমাদের ওপরে লাগিয়ে দেয়—
“WORK IN PROGRESS” ট্যাগ।

শুধু রাতের আকাশই
সম্পাদনা-বিহীন;
তারারা আজও
নিজেদের ভুল বানান নিয়ে
ঝলমল করতে ভয় পায় না।

অব্যবহৃত মানচিত্রের দেশ
যে দেশে আমি জন্মাইনি
সেই দেশের মানচিত্র
আমার পকেটে কেন?—
প্রশ্নটা খুব পুরোনো;
উত্তরে শুধু একটি QR-কোড
যা স্ক্যান করলে দেখায়—
“NO DATA AVAILABLE”

স্টেশনের দেয়ালে ঝোলানো
এক পুরোনো ঘড়ি
আজ প্রথমবারের মতো
নিজের কাঁটাগুলো খুলে রেখে
ঘুমোতে গেছে।
সময়ের গায়ে
একটা অসমাপ্ত মন্তব্য:
“EDIT SUGGESTED…”

রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে
তিনজন পথহারা মানুষ—
তারা নাকি একই স্বপ্নের
ভিন্ন সংস্করণ।
একজনের হাতে স্মৃতির রং,
আরেকজনের কাছে কেবল
একটা সাইলেন্ট মোড,
তৃতীয়জন বলে—
“আমি তো নই! আমাকে ভাবা হয়েছে।”

আমার কানে ভেসে আসে
এক অদৃশ্য ঘোষকের গলা—
যে বলে,
এ পৃথিবী আসলে
একটা প্রুফ-পেজের অনুশোচনা,
যেখানে ভুলটাই সত্য
আর সত্যটা ভুল হওয়ার অপেক্ষায়।

রাত হলে
বাতাস এসে টেবিলে রেখে যায়
একটা খাম—
তার ভেতরে
নিখোঁজ শব্দদের তালিকা।
প্রতিটির পাশে লেখা—
“FOUND IN SOMEONE ELSE’S STORY.”

শেষে দেখি,
চাঁদও আজ
নিজেকে আনইনস্টল করেছে;
আকাশে তাই
একটা নীল নোটিফিকেশন—
“LIGHT MODE TEMPORARILY UNAVAILABLE.”

আমরা হাঁটি,
অব্যবহৃত মানচিত্রের ভাঁজ খুলে—
জানি যে কোনো পথই ঠিক নয়,
তবু প্রতিটি ভুলপথেই
অল্প কিছু বিস্ময়
অল্প কিছু ভাঙা গল্প
আজও অপেক্ষা করে থাকে।

কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

অস্থিরতার ডিগ্রি
মাস্টার্সের সার্টিফিকেট—
শুকনো পাতার মতো উড়ে বেড়ায় ড্রয়ারের অন্ধকারে,
কেউ জিজ্ঞেস করে না তার রং,
কেউ শোনে না তার নীরব কান্না।

ঘুম ভাঙে প্রতিদিন
নতুন নিয়োগের মিথ্যে ঘোষণায়,
বিজ্ঞাপনগুলো—
ঠিক যেন ভাঙা রেডিয়োর ধাতব কাশি।
“Experience চাই!”—
আর অভিজ্ঞতাই তো নেই,
কারণ সুযোগ কখনও এলই না।

চায়ের কাপে ধোঁয়া ওঠে বিষণ্ণ এক মানচিত্র,
যেখানে আমার শহরের চাকরিগুলো
সব পথ ভুলে গিয়েছে অন্য কোনো দিকে—
যে পথে আমার ঠিকানা নেই।

রাতগুলো অতল গর্ত;
সেখানে আমি ডুবে যাই নিজেরই নাম ভুলে,
ভাবি—
জীবন কি সত্যিই একটা প্রতিযোগিতা,
না কি শুধুই অপেক্ষার স্টেশন,
যেখানে ট্রেন আসে না,
টিকিট ছুড়ে ফেলে যায় হাওয়া?

তবু ভোরের আলো
কাগজের উপর পড়লে
একটু উষ্ণ লাগে—
যেন পৃথিবী ফিসফিস করে বলে,
“তুমি এখনও শেষ হওনি,
এখনও লেখার বাকি আছে
একটা অসম্ভব সুন্দর ভবিষ্যৎ।”

ধুলোয় লেখা রাষ্ট্র
রাস্তার ধুলো আজকাল বড়ো অভিমানী—
যারা ছুঁয়ে যায়,
তাদের জুতোর তলায় লেগে থাকে
একটা অদৃশ্য ইতিহাস।

বাজারের ভিড়ের মধ্যে
হঠাৎ দেখি—
সমাজব্যবস্থার নীল নকশা
চুপচাপ কাগজ থেকে নেমে
মানুষের ভিড়েই হাঁটছে।
তার চোখে ক্লান্তি,
কণ্ঠে এক অঘোষিত হাহাকার।

সামনের মোড়ে দাঁড়িয়ে
এক ভিখিরি বলে ওঠে—
“আইন? ওটা শুধু শব্দ,
আমার শরীরের মতো ক্ষয় হয় না।”
আমি শুনি, অথচ কিছু বলি না।
লোকেরা তাড়াহুড়ো করে
একে উন্নয়ন বলে পাশ কাটায়।

সরকারি ঘরের ফাইলগুলো
অপেক্ষা করতে করতে
নিজেরাই পুরোনো হয়ে যায়,
আর মানুষ?
তারা অপেক্ষা করতে করতে
ধুলো হয়ে যায়।

এই সমাজের দেয়ালে
প্রতিদিন নতুন পোস্টার,
নতুন প্রতিশ্রুতি—
কিন্তু সব কিছুর তলায়
একটা পুরোনো যন্ত্রণা
ধীরে ধীরে শব্দ তোলে,
যেন ভাঙা ট্রেনের
শেষ কামরার চিঁ-চিঁ আওয়াজ।

তবু বিশ্বাস করি—
যখন কোনো শিশু
প্রত্যাখ্যাত শহরের ভিতরেও
এক মুঠো স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখে,
সেদিন সমাজব্যবস্থার
সবচেয়ে অন্ধ কার্নিশেও
সূর্যের ছোটো একটি দাগ
জেগে ওঠে।

শূন্যের ভিতর তোমার প্রতিলিপি
তোমাকে ভালোবাসা মানে—
ফোনটাকে সাইলেন্টে রেখে
তোমার শব্দ খোঁজা।

দেয়ালে ছায়া বদলায়,
আমি ভাবি
এগুলো কি তোমার ফেলা পুরোনো ভঙ্গিমা?

টেবিলের কোণে তোমার স্পর্শের ধুলো,
তবু নড়লেই
ঝরে যায় আমার নাম।

আজকাল প্রেম খুব কম শব্দে আসে—
একটা শ্বাস,
একটা ফাঁকা চেয়ার,
একটা না-পাঠানো মেসেজ,
এবং অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার
এক ধরনের বিজ্ঞান।

তুমি নেই—
তবু আমার ভেতর
একটা তোমার প্রতিলিপি
চলাফেরা করে।

তাকে ডিলিট করি না—
কারণ শূন্য জায়গাগুলো
তোমাকেই বেশি মানায়।

চামড়ার নিচে আগুন
রাতের জানলার কাচে
তোমার নামটা আঁকছিলাম আঙুলের গরমে—
নগরীর নিঃশব্দ নিয়ন আলো
হঠাৎ আমার বুকের ভিতর উগ্র হয়ে উঠল।

তুমি এলে—
শরীরের ভাষা আগে কথা বলল,
শব্দেরা তখনও তৈরি হয়নি।
মনের ভেতর জমে থাকা সব উন্মাদনা
দরজা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে এল এক নিঃশ্বাসে।

তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে
আমি প্রথম বুঝলাম
ভালোবাসা শুধু কোমলতার নয়,
এটা একরকম দহনও—
যার ছাইয়ে জন্ম নেয়
আরও নতুন ক্ষুধা, আরও নতুন কোমলতা।

আমাদের বিছানা
হঠাৎ হয়ে উঠল একটা ছোট্ট মহাবিশ্ব,
যেখানে সময় গলে যায়,
দেহের প্রতিটা রেখা নতুন মানচিত্র লেখে
আর দু-জনের শ্বাস
এক অদ্ভুত যুদ্ধবিরতি তৈরি করে।

কিন্তু শেষ রাতের পরও
তোমার গা থেকে থাকা ঘামের গন্ধ
আমার হাতের তালুতে রয়ে যায়—
একটা স্মৃতি,
যা প্রেমকে দেহে রাখে,
দেহকে প্রেমে।

আমরা জানি—
এই আধুনিক শহর প্রেমকে মাপে মিনিটে,
তবুও আমরা দু-জন
একের গায়ে আরেকটা সত্য লিখে যাই—
যা সময়ের চেয়ে বড়ো,
নগরীর চেয়ে নিষ্ঠুর,
কিন্তু হৃদয়ের চেয়ে উজ্জ্বল।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

Image Description

sukanta debnath

3 দিন আগে

কিছুটা অন্যরকম


লেখক

জন্ম ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০০২, নৈহাটি শহরে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা ও চর্চা। স্নাতক রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির, বেলুড় থেকে। স্নাতকোত্তর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছোটোবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ, ভালোবাসা। মিশন স্কুলে থাকাকালীন বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা, পরে কলেজে সাহিত্য নিয়ে পঠনপাঠন ও পাশাপাশি লেখালেখির শুরু। বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশিত। ভালোলাগা: ফুটবল, লেখালেখি, সিনেমা।

অন্যান্য লেখা