লেখক: শাশ্বতী লাহিড়ী
প্রকাশক: শাশ্বতী লাহিড়ী
এ কাহিনি এ কালের অপু-দুর্গা-সর্বজয়ার কাহিনি। বিভূতিবাবুর লেখনিতে শুধু দুর্গা ও হরিহর মরিয়াছিল। এখানে শুধু হরিহর মরিলেন। দুর্গা মরিল না শেষ পর্যন্ত। পাড়ার ধ্বন্বন্তরী অবনি কবিরাজের অব্যর্থ ঔষধ সেবনেই হউক কিংবা রেলগাড়ি দেখিবার প্রবল ব্যাকুল ইচ্ছেতেই হউক, মৃত্যুপথযাত্রী দুর্গা বাঁচিয়া উঠিল অবশেষে। বিভূতিবাবুর অনুপস্থিতির সুযোগে বিধাতা মহাশয়, তাঁহার দুর্গাকে রূপকথার জিয়নকাঠি ছোঁয়াইয়া দিব্যি বাঁচাইয়া আনিলেন। দুর্গা রহিল, অপু রহিল, আর রহিলেন সরু সাদা পাড়ওয়ালা বর্ণহীন বস্ত্ৰাচ্ছাদিত স্বামীহারা সর্বজয়া। এইখান হইতেই পুনরায় নতুন করিয়া শুরু হইল দুই ভ্রাতা ও ভগিনীর আত্মায় আত্মায় সহবাসের এক সুরম্য কাহিনি। তাহাদের সহযাত্রার দৈর্ঘ্য ক্রমাগত বাড়িতে লাগিল দূরে, অচিন্ত্যনীয় দূরে, হারাইয়া যাওয়া রেললাইনের মতো।
একালের অপু-দুর্গার কাহিনিতে সর্বজয়া আর সেই পুরাতন সর্বজয়ার ন্যায় বিপর্যয়-ক্লিষ্ট, তিরিক্ষি মেজাজী, অশীতিপর ননদিনীর প্রতি অতিশয় বে-দরদী এবং না-শিক্ষিতা নহেন। সর্বজয়া আধুনিক এবং পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিতা, বিদূষী, ব্যক্তিত্বময়ী, গভীর আত্মসম্মানী এবং স্নেহময়ী। সন্তানদেরকে অনুশাসনে তাহার জুড়ি নাই আবার স্নেহে-বাৎসল্যে আত্মত্যাগেরও কোনো সীমা নাই। শিক্ষিতা এবং দূরদর্শী সর্বজয়া তাহার বড়ো আদরের পুত্রসন্তানটির মধ্যে এক বড়ো মাপের সম্ভাবনা অনুভব করিলেন, কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে বিকশিত করিতে গেলে মফঃস্বলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাহা পূরণ হইবার নহে। অতএব প্রিয় পুত্রটিকে তাহার এতকালের বুকে আগলাইয়া লালন-পালনের যে অভ্যাস, দৃঢ় সিদ্ধান্তে সেই দড়িদড়া আলগা করিয়া এক সাধ্যাতীত স্বপ্ন বুকে লইয়া কলকাতায় বিদ্যাশিক্ষা করিতে পাঠাইবার সিদ্ধান্ত লইয়া ফেলিলেন।
অপু চলিয়া গেল। মিলিয়া গেল মহানগরীর ভিড়ে। তাহাকে ভোরের প্রতিশ্রুত রোদ্দুর হইতে হইবে।
অপুর এই চলিয়া যাওয়ার ঘটনাটির উৎস হইতেই উদ্গত হইয়া উঠিল এই কাহিনির মুখবন্ধ।
দারুণ
© 2022 All Rights Reserved by ketab-e | This website is owned by Bestread Publications and Digital Services Private Limited. Design By Mindmine and Developed By Technophilix.
বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া