প্রকাশিত হল অরিন্দম রায়ের গুচ্ছ কবিতা— ‘মায়াগৃহ ও অন্যান্য কবিতা’। নাম কবিতা সহ রয়েছে ‘প্রিল্যুড’, ‘অবিবেচনা’, ‘ধম্মের ষাঁড়’, ‘প্রায় শৈশব’ এবং ‘রাষ্ট্রবিষয়ক’ কবিতাগুলি।
মায়াগৃহ
যদি তুমি বেড়ে দাও মায়া মাখা ভাত
আমি খাবো
বুভুক্ষু আমার শুধু ওইটুকু আছে
বাকিটা বানের জলে, বাকিটা স্নানের জলে ভেসে চলে গেছে
যদি তুমি বেড়ে দাও মায়া মাখা ভাত
শাকান্ন ছলনা দিয়ে আমি মেখে খাবো
পৃথিবী নিষ্ঠুর কত ভেবে দেখব না
নরম মাটিতে আমি ছায়াগৃহ করব নির্মাণ
সূর্যাস্ত নেমে এলে দু-জনে বলব কথা বহু পুরাতন
বীজ থেকে যেইভাবে গজায় উদ্ভিদ
আমরাও ধীরে ধীরে ফের জন্মাব
প্রিল্যুড
এখন জীবনে আর গান নেই কোনো
নেই মহামান্য আদালত, বিচারবিভাগ!
মানুষের কাছে বসলে গা যেন রি রি করে ওঠে!
বেঁচে থাকার রাজনীতি, মারপ্যাঁচ এইসমস্ত
বুঝতে বুঝতে বয়স বেড়ে গেল… তাহলে এখন
দু-দশ টাকায় ফূর্তি কিনতে বেরিয়ে হতবাক
আমার কোনো ঘর নেই, বিস্তর আক্ষেপও নেই কোনো
জন্মেই বিক্রি হয়ে যাওয়া কুকুরছানার মতো বিরল ক্রন্দন আছে!
ক্রোধ নেই কোনো।
অবিবেচনা
দিনান্তে মিলিয়ে গেছে পাহাড়ি রাস্তা তাকে আমি গলি নামে চিনি
পাহাড়ে ওঠার সময় বমি পায়, গা গুলিয়ে ওঠে
সমতলবাসী আমি অত উঁচু মানাতে পারি না
গড়িয়ে নামার মতো ইচ্ছে হয়, অনায়াস, শ্রম নেই কোনো
হাফবয়েল ডিমের ভেতর যেরকম কুসুম ফুটে থাকে!
সেরকম সূর্য ওঠে! লোকে ছবি তুলে রাখে
আমি শ্রম বিমুখ, গড়িয়ে নামতে চাই… উচ্চতা ভীতিপ্রদ লাগে
অনেক উপরে দেখি সাবানের ফেনার মতো মেঘ ভেসে আছে
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
ধম্মের ষাঁড়
অনন্ত তুমি আজ কার বাড়ি খাবে? কাজকম্মো কিছু নেই সারাদিন
টইটই খালি। আজ এর খিদমত খাটছ কাল আবার দৌড় দিচ্ছ
অন্য পাড়ায়। এভাবে আর কদ্দিন চলবে? পরের উপকার করলে
লোকে আজকাল বোকা বলে, আহাম্মক আরও কীসব বলে
এর তার বাড়িতে বসে খেতে ভালো লাগে তোমার? লজ্জা যে বেচে
খেয়েছ জানি তাই বলে বুড়ো বাপ-মার কথা একবারও ভাববে না?
আজ কত বছর হল, সন্ধে পেরিয়ে গেল তোমার অপেক্ষায় তাদের
চোখদুটো অন্ধ হল ধীরে খুব ধীরে যেরকম কেরোসিন ফুরিয়ে এলে
আস্তে আস্তে বাতি নিভে যায়। তোমার মা তার একটা চোখ বন্ধক রেখে
চাল নিয়ে এসেছেন, তোমার বাবা পাঁজরের হাড় ভেঙে জ্বালানি বানিয়েছেন!
এরপরেও তোমার এত বেয়াক্কেলপনা, এত চূড়ামণি সাজা দেখলে মনে হয়
এক ঘুসি মেরে তোমার নাক ফাটিয়ে দিই! অনন্ত, কী হল? সাড়া দিচ্ছ না যে?
প্রায় শৈশব
প্রতিদিন বিচ্যুত হই লাবণ্য থেকে
ঘন ঘন বেজে ওঠে মোবাইল ফোন
বাচাল বউয়ের চোটে নেশামুক্তি ঘটে!
ঘাড়ে খুব ব্যথা নিয়ে বাজারে পৌঁছালে
রাঁঢ় পোষা বাবুরা ফেরে পাকা পোনা কিনে
লাবণ্য কেজি প্রতি সতেরো-শো দাম!
তোমারও ব্লাউজ ফেঁসে গেছে!
আদুর গায়ে রিফু করতে বসেছ
ছুঁচে সুতো পড়াতে গিয়ে দেখি
হেলে পড়া গ্লোবের মতো
স্তনদুটো দু-দিকে তাকিয়ে
ব্যাখ্যা লিখে রাখি
তোমার মুখে ফুটে ওঠে বাৎসল্যভাব
রাষ্ট্রবিষয়ক
ভেবেছি মশকরা হবে হাসিঠাট্টা হবে আর গড়াগড়ি দেব
যা সব দিনকাল এল! উটের গাম্ভীর্য নিয়ে হুমকি দিয়ে
চলে গেল কুচো এক নেতা তার মাথায় বৃহস্পতির হাত!
আমি ভাবলাম হাসব আর খেলব কুমিরডাঙা, বাগাডুলি
নিদেনপক্ষে কয়েকদান লুডো অলস দুপুরে
কিন্তু হায়! সনাতন পণ্ডিতেরা বলেছেন শিয়রে সংকট
সূর্য অস্ত না গেলে জল স্পর্শ বারণ! তাহলে ‘কুমির তোর
জলকে নেমেছি’ বলে কীভাবে তোমাকে ছোঁব?
বয়স বাড়ার হেতু কোনোদিন প্রেমে পড়ব না?
হাওয়া দিলে স্কার্ট ওড়ে কিশোরীর হাঁটু দেখা যায়
বৃন্ত দু-টি ফুটে আছে দেখলেই জ্বর আসে ধরা পড়ে যাই!
‘তোমার জামাটি সাদা যেন চিরকাল অমলিন থাকে’ অস্ফুটে বলি
ভাবলাম মশকরা হবে কী করতে কী যে হয়ে গেল!
এখন কি এসব থামাতে দেশজুড়ে সেনা নামাতে হবে?
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন