প্রকাশিত হল শিশির আজমের ‘দালির ঘড়ি ও অন্যান্য কবিতা’– নাম কবিতা ছাড়াও রয়েছে ‘ফেল্লিনি’, ‘বুকোউস্কি আমারে বিখ্যাত বানাবার চায়’, ‘সল্ট পোয়েট্রি’, এবং ‘তখন আমরা কথা বলছিলাম’।
দালির ঘড়ি
‘স্যুররিয়াল না, এমন কি রিয়ালও না’—
দালি বলল।
বিশাল টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা দেখছিলাম
ওর বিশাল অর্গ্যানিক ঘড়িটাকে।
ঘড়ি
টেবিলের ওপর
টেবিল চুঁয়ে মেঝেয়
আইসক্রিমের মতো গলে গলে পড়ছে।
দেখুন, দেখুন আমাদের টেবিলে প্রতিদিন
প্রতি মুহূর্তে
গলে গলে পড়ছে, চুঁয়ে পড়ছে
আইসক্রিম
নিজের মতো, নিঃশঙ্ক চিত্তে,
আইসক্রিম আর দালির রক্ত।
***
ফেল্লিনি
রিমিনি কখনো আমি যাইনি মানে ফেল্লিনি যেখানে জন্মেছিলেন।
‘তো?’
প্রশ্ন করতে পারো তোমরা।
আসলে উত্তরটা আমার কাছে নেই।
কেবল জানি রিমিনি কখনো আমি যাইনি, আর ফেল্লিনি
আমার বন্ধু ফেদেরিকো ফেল্লিনি
ওকে কখনো জিজ্ঞেসও করিনি রিমিনি শহরটা কীরকম
অথবা রোমের কাছাকাছি কি না।
যাহোক
আমি বিশ্বাস করি উনি কোনোভাবেই সার্কাসের স্টেজ হিসেবে
রিমিনিকে ভাবেননি
অথবা
পুরো পৃথিবীটাকেই উনি সার্কাসের স্টেজ হিসেবে দেখেছেন
ড্রামাটিক
প্যারাডক্সিকাল এ্যান্ড আ বাঞ্চ অব স্যুররিয়াল সিকোয়েন্সেস
হয়তো
আমরা মানতে চাইনি
***
বুকোউস্কি আমারে বিখ্যাত বানাবার চায়
আজ, ভোররাতের দিকে
বুকোউস্কির লগে আমার দেখা,
স্বপ্নে।
‘কোন মাইয়ালোক তোমার লগে নাই তো!’— কইলাম ওরে।
‘আছিল একটা, ইয়াং আর কালো হাই-হিল জুতার।
(এক আফ্রো-আমেরিকান গিটারিস্ট জুতাটা ওরে গিফ্ট করছে, কইলো তো তাই!)
মিষ্টি কইরা তিনডা চুমা দিছি ওরে
তারপর ওই যে ব্রিজ দেখতাছ ধইরা নাও ওইটার নাম হাতিরঝিল
হ্যাঁ অর ওপর থিকা ধাক্কাইয়া ফাইলা দিছি
নীচে,
ও চাইছিল আমারে ভালোবাসতে
আমার কবিতা আর আমার সিগ্রেটের ধোঁয়া আর আমার হুইস্কিসহ।’
‘ব্রিজটার নাম এখন কইতে চাইছি না আর ওটা তেমন বিখ্যাতও না
ব্রিজ না ধইরা নাও ওইটা উঁচা এক ফ্লাইওভার।
ওই মাইয়াটা, স্কিন-টাইট প্যান্ট পরা, আরও আরও যত মাইয়া
আমার লগে যারা থাকে
ছিল
অরা তো কেউই বিখ্যাত না, ওই ব্রিজটাও বিখ্যাত না,
হ তুমি বিখ্যাত হইবার পারো
(দ্যাখো না জনগণের ভালো না কইরাও রাজনৈতিক নেতারা কেমন জনপ্রিয় হয়!)
খুব বেশি কবিতা না লিইখাও
বুকোউস্কি হইবার পারো
এর লাইগা জাস্ট এক বোতল ফ্রেশ হুইস্কি নাও
হৃষ্টপুষ্ট কোনো মাইয়া যারে আদর করা যায় বা রেসপেক্ট করা যায়
গলা জড়াইয়া ধইরা
নির্জন ওই ব্রিজটার বা ফ্লাইওভারের বা সিগ্রেটের গোলাকার ধোঁয়ার
মাঝামাঝি
উইঠা যাও
মিষ্টি কইরা অর গালে চুমা দাও
একটা
দুইডা
তিনডা
তারপর ধাক্কাইয়া ওরে ফাইলা দাও
নীচে,
দেখবা তুমিও বিখ্যাত হয়া গেছ।’
কিন্তু আমি তো বুকোউস্কি হবার চাই না
আর আমার নাই কোনো মাইয়া ব্লাক হাই-হিল জুতার
নেভি-ব্লু স্কিন-টাইট প্যান্ট
ব্লু-অরেঞ্জ টি-শার্ট
পার্পল কালার লিপস্টিক
সিগ্রেট
এমনকী আমার কোনো ব্রিজও নাই
যেইটা এখনও তেমন বিখ্যাত হয়া যায় নাই।
***
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
সল্ট পোয়েট্রি
আজ অব্দি এমন কোনো কবিতা আমি লিখিনি
যাতে নুন দেয়া আছে
নুন মানে নুন
আর আপনি জানেন নুন খেয়ে কেউ নিমকহারামি করে না
(কবিতায় আমি নুন দিই। কিন্তু তার পরিমাণটা এমন
আর কবিতার অন্যান্য অনুসঙ্গে
তার সংশ্লেষণ এমন
যে পাঠক তাকে আলাদাভাবে শনাক্ত করবার কথা ভাবেন না।)
ফলে আমার কবিতার গ্রাহকসংখ্যা কম
নুন আপনার পছন্দ
নুন আমারও পছন্দ
হ্যাঁ এমন একটা কবিতা এবার আমাকে লিখতে হবে
যাতে যথেষ্ট পরিমাণে নুন দেয়া থাকবে
যথেষ্ট
যথেষ্ট
নুন
যেন বাংলা একাডেমির জিভ পুড়ে যায়
***
তখন আমরা কথা বলছিলাম
তখন আমরা কথা বলছিলাম
কথাই বলছিলাম
আসলে
কিছু বলবার ছিল না
গ্রিক মিথলজির বইটা টেবিল থেকে বুকশেলফে
উঠিয়ে রেখে
এক দুপুরে
আমরা চড়ে বসব সোনালি এক মাছের ডানায়
নিঃসঙ্কোচে
তারপর যাব মাছেদেরই দেশে
সেখানে টেলিভিশন আর সুপারশপ নেই
F-35 নেই
সেখানে কেউ ঘুমোয় না
এমনকী মৃতরাও
আর সবাই ফুল নিয়ে খেলতে ভালোবাসে
আগুনের তাজা তাজা ফুল
হ্যাঁ এমন স্বপ্ন সবাই আমরা দেখি
সবাই
কিন্তু কেউ কাউকে
বলিনে
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
শামীম নওরোজ
14 ঘন্টা আগেকবি শিশির আজম আমার আপন মামা। ওঁর কবিতা পড়ে আমি সব সময় মুগ্ধ হই।